মহুয়া ঘোষাল দুর্গাপুর ২ মার্চ ২০২৩
ত্রিপুরা অভিষেকের মুখে চুনকালি মাখিয়ে দিয়েছে । নোটার থেকেও কম ভোট পেয়েছে তৃণমুল ত্রিপুরাতে । মেঘালয়েও মেঘে ঢাকা তারা তৃণমুল । এই মুহুর্তে বাংলায় সাগরদিঘির পরাজয় বড্ড জোর ধাক্কা তৃণমুলের কাছে । সাগরদিঘি । তিনবার অর্থাৎ ২০১১ থেকে ২০২১ তিনবার সাগরদিঘি দখল করেছিল তৃণমুল । প্রয়াত মন্ত্রী সুবত সাহা মাত্র দু বছর আগেই ২০২১ এ ৫০২১৬ ভোটে জয় পেয়েছিলেন এই সাগরদিঘিতে । সেসময় বিজেপি পেয়েছিল ২৪ শতাংশ ভোট আর বাম কংগ্রেস জোট পেয়েছিল ১৯ শতাংশ ভোট । ২০২৩ এ উপনির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে হার হল তৃণমুল প্রার্থীর । প্রায় ২৩ হাজার ভোটে জয় পেলেন কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস । শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি কার্যত পথে বসিয়েছে তৃণমুলকে সাথে আছে চরম গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং তৃণমুলের সেকেন্ড ইন চিফ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন তৃণমুল মডেল কার্যত আমজনতা ত্যাগ করেছে ? এটাই এখন জোর চর্চা তৃণমুলের অন্দরে । তবে তৃণমুল নেতারা বেশ কিছুটা হতাশ যদিও মুখে তারা তা স্বিকার করছেন না । একসময়ের অধিরের গড় থেকে জয় পেয়ে রাজ্যে শুন্য কংগ্রেস খাতা খুললো বিধানসভায় বাইরন বিশ্বাসের হাত ধরে ।
রাজনৈতিক মহল মনে করছেন দুর্নীতি যখন চরমভাবে প্রকাশ হয়ে পরে তখন বাংলা তথা ভারতের ভোটারেরা মুখ ঘুরিয়ে নেয় । জরুরী অবস্থার পরেই ইন্দিরা গান্ধী হেরেছিলেন , রাজীব গান্ধীর কংগ্রেসের পরাজয় হয় বফর্স কেলেঙ্কারি সামনে আসার পরে , নরসীমা রাও আর মনোমোহনের কংগ্রেসের পরাজয় হয় সেই দুর্নীতির জালেই । অটলবিহারি বাজপেয়ী সরকারকেও একই কারনে মানুষ হারিয়ে দেয় । প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতির ধাক্কায় জেলে , আজকেই সাগরদিঘির হারের দিন অনুব্রতকে দিল্লী নিয়ে যাচ্ছে ই ডি । কার্যত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তায় চরম ধাক্কা দিয়েছে প্রাক্তন শিক্ষা মন্ত্রী পার্থর শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল । অভিষেকের নেতৃত্বে তৃণমুল ত্রিপুরাতে মাত্র দশমিক নয় শতাংশ ভোট পেয়েছে । বাংলায় জয় আসবে এক চুটকিতেই এমন ধারনা নিয়ে অভিষেক যেভাবে ত্রিপুরা এবং মেঘালয় নিয়ে মেতেছিলেন তাতে এই পরাজয় অভিষেককে শিক্ষা দেবে আগে ঘর সামলে অন্যের ঘর দখল করতে যেতে হয় বলে মত রাজনৈতিক মহলের । দুর্নীতিযুক্ত সরকার তৃণমূল সরকার এই মতেই আস্থা রেখে সাগরদিঘির ভোটারেরা মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে যে সাগরদিঘি প্রয়াত সুব্রত সাহাকে ৫০ হাজার ভোটে জিতিয়েছিল ।তবে অনেকেই মনে করছেন ৬৪ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটার থাকা সাগরদিঘির ভোটারেরা এবার তৃণমুল থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার জন্য হার হয়েছে তৃণমুলের । নোশাদ সিদ্দিকির গ্রেফতার মেনে নিতে পারে নি সংখ্যালঘু ভোটারেরা বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল । এছাড়াও রয়েছে গেরুয়া শিবিরের প্রতি মোহভঙ্গ এবং গেরুয়া শিবিরের ভোট কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছে ।
সাগরদিঘিতে জয় পাওয়ার পরেই শিল্পাঞ্চলের কংগ্রেস অক্সিজেন পেয়েছে আর তৃণমুল বেজায় মুষড়ে পড়েছে । পশ্চিম বর্ধমান জেলা কংগ্রেস সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন “ তৃণমুল সরকার আর বিজেপির প্রতি মানুষের মোহভঙ্গ হয়েছে আর মানুষ চাইছে ধর্মনিরপক্ষ দলের জোটকেই আর মানুষ তার বিকল্প পেয়ে গিয়েছে বলেই জয় । মানুষ বিকল্প চাইছে তৃণমুলকে সরাতে চাইছে”।
সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমানের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন দুর্নীতির সরকার তৃণমুল আর মানুষ দেখছে এই সরকার কার্যত ব্যর্থ তাই মানুষ বামকংগ্রেস জোটের প্রার্থীকে জিতিয়ে দেখিয়ে দিল মানুষ চাইছে তৃণমুল সরকারকে সরাতে”।
তৃণমুলের সাধারন সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন “ এই পরাজয়ের কারন বামকংগ্রেস আর বিজেপির একজোট হয়ে তৃণমুলের বিরুদ্ধে লড়াই করা । ভোটের আগেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছিল বিজেপি সাগরদিঘিতে কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দেবে আর তাই দেখা গিয়েছে বিজেপি ভোট কংগ্রেস প্রার্থী পেয়েছে”। এই তৃণমুল নেতা বলেন পঞ্চায়েত নির্বাচনে সাগরদিঘির হার কোন প্রভাব ফেলবে না । তিনি কটাক্ষ করে বলেন যারা বলেন গণতন্ত্র নাই তারা দেখুন রাজ্যে গণতন্ত্র আছে ।
সাগরদিঘি দেখিয়ে দিল বিজেপি ক্রমশ পিছু হটছে , তাদের প্রতি মোহভঙ্গ হচ্ছে বাংলার ।