মহুয়া ঘোষাল দুর্গাপুর ১৪ মার্চ ২০২৩
তৃণমুলের বিড়ম্বনা বাড়ছে ক্রমাগত । সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন । তৃণমুলের অন্দর মহলে চলছে জোর লবিবাজি টিকিট পাওয়া নিয়ে এমনটাই চর্চা ঘাসফুলের অন্দর মহলে । এদিকে একটি আবেদন পত্র আচমকাই ভাইরাল হয়ে যায় । সেই আবেদন পত্র তৃণমুলের । তৃণমুল কর্মীরা পঞ্চায়েত প্রার্থী হতে গেলে এই আবেদন পত্র পূরণ করতে বাধ্য । আর এই আবেদন পত্রে বেশ কয়েকটি কলাম রয়েছে যেখানে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তৃণমুল কর্মী কিম্বা নেতাদের যেখানে নিজেদেরকে দুর্নীতি মুক্ত বলে ঘোষণা করতে হবে আর সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত নয় বলেই একপ্রকার মুচলেখা দিতে হবে । বিরোধীরা কটাক্ষ করেছে ঠগ বাছতে গাঁ উজার হয়ে যাবে তৃণমুলে আর তাহলে প্রার্থী দিতেই পারবে না তৃণমুল । কার্যত এখন কাঁকসা ব্লকে এক চরম হাস্যকর অবস্থায় রয়েছে তৃণমুল এই আবেদন পত্র ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পরেই ।
তৃণমুলের অন্দরে চরম বিতর্ক দেখা দিয়েছে এই ঘটনায় । বামুনাড়ার এক তৃণমুল নেতা নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে [ নাম প্রকাশে অনিচ্ছার কারন হিসাবে জানিয়েছেন দেখা যাবে সামাজিক মাধ্যমে পঞ্চায়েত মন্ত্রীর অনুগামী সাংগঠনিক নেতা আমাকে দল থেকে বহিস্কার করছে বলে লিখে দেবে , কে আর বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে ] বলেন “ তৃণমুল সুপ্রীমো এধরনের একটা সার্বিক আবেদন পত্র প্রকাশ করলে নিশ্চয় তা সার্বিকভাবেই প্রকাশ হতো কিন্তু তা যখন হয় নি তাহলে বুঝতে হবে এটা আসলে বর্তমান ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী নিজেদের গোষ্ঠীর লোকেদের টিকিট দেওয়ার জন্যই একধরনের চালাকি করেছে আর এসব করে দলের নাম ডোবানো ছাড়া আর কিছুই করা হচ্ছে না”।
বামুনাড়ার আর এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন “ মন্ত্রীর দেখা উচিৎ এবং এধরনের নেতাদের হাতে সংগঠনের ভার দিলে দলের ভরাডুবির জন্য বিরোধীদের প্রয়োজন নেই , এরাই যথেষ্ট কারন দলের লোক চলতি পঞ্চায়েত সদস্যদের দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ মেনে নিচ্ছেন । আসলে এখন তৃণমুলে সবাই রাজা যে যা পারছে তাই করছে , এটা মন্ত্রীর দেখা উচিৎ” ।
বনকাটির এক পঞ্চায়েত সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন “ বিরোধীরা যেভাবে বিশেষ করে সিপিএম এই ভাইরাল আবেদন পত্র নিয়ে যেভাবে হেনস্থা করছে প্রকাশ্যে তার জন্য দায়ী এমন কিছু নেতা যাদের হাতে কাঁকসায় দলের ভার রয়েছে । যারা থানায় সিন্ডিকেটের মিডল ম্যান হয়ে দালালি করতে যায় অন্তত তারা এসব নাটক না করলেও পারতো”।
বিদবিহারের এক পঞ্চায়েত সদস্য বলেন “ কাঁকসায় সমস্ত ধরনের সাংগঠনিক পদের পুর্ণ রদবদল প্রয়োজন এটা মন্ত্রী যত তাড়াতাড়ি বুঝবেন ততই ভাল হবে দলের পক্ষ থেকে না হলে সাতটি পঞ্চায়েতই হারাতে হবে দলকে”। গোপালপুরের এক পঞ্চায়েত সদস্য বলেন “ আমাদের চোর বলার অধিকার কারো নেই , চোর বলার আগে প্রমাণ দিতে হবে । দল মনে না করলে টিকিট দেবে না , দলের পদে থাকলে ভাল কথা আর পদ না পেলেই দলের নিন্দা করি না , দল করি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখেই , পাঁচিলে বসা নেতাকে দেখে নয়”।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেছেন “ চোরেদের আবার দুর্নীতি মুক্ত হওয়ার মুচলেখা , আসলে কালিঘাট আর ক্যামাক স্ট্রিটে দুর্নীতির টাকা পাঠানোর টেন্ডার ফর্ম” ।
তৃণমুলের সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ভি শিবদাসন বলেন “ এমন কোন আবেদন পত্র প্রকাশ করা হয় নি দলের উর্ধ্বতন নেতৃত্বের পক্ষ থেকে । তদন্ত করে দেখতে হবে কে এটা করেছে । প্রার্থী বাছবেন তৃণমুল নেত্রী । এধরনের কাজ করার আগে দলের সর্বচ্চো নেতৃত্বের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা তাও দেখতে হবে । এটা করতে হলে দলের সর্বচ্চো নেতৃত্বের অনুমতি লাগে সেটা মনে রাখতে হবে”।