top of page
  • Mahua Ghosal

উজবুক নামাঃ ডিজিটাল চাণক্য ডিজিটাল প্রতিজ্ঞা বাস্তবের ময়দানে জাঙিয়ার বুকপকেট



উজবুকস্য উজবুক

এই মুহুর্তে ডিজিটাল চাণক্য বাংলার টিভি আর রাজনীতিতে বেশ চমক এনে দিয়েছে । ডিজিটাল মুন্ডন নিয়েও চর্চায় মেতে বঙ্গ রাজনীতির টিভিগুলি । ইতিহাসে একটা গল্প পড়েছিলাম । প্রাচীন ইতিহাস । নন্দরাজার অপমানে অপমানিত হয়ে চাণক্য প্রতিজ্ঞা করেছিলেন নন্দবংশকে উৎখাত না করতে পারা পর্যন্ত তিনি তার শিখা বাঁধবেন না । আচমকাই এবঙ্গে ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল চাণক্য এসে হাজির । বলা ভালো তৃণমুল আর পুলিশ নিয়ে এল ডিজিটাল চাণক্যকে । এই ডিজিটাল যুগের ডিজিটাল চাণক্য হলেন কংগ্রেস নেতা বরঞ্চ বলা ভালো কংগ্রেসের টিভি নেতা কৌস্তভ বাগচি মাথা মুন্ডন করে প্রতিজ্ঞা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে উৎখাত না করা পর্যন্ত তিনি মাথা ন্যাড়াই রাখবেন , চুল গজাতে দেবেন না । ভাবছিলাম ভদ্রনুকেরা যেমন প্রতিদিন সকালে উঠেই দাড়ি সেভিং করেন তেমনি ডিজিটাল চাণক্যকে প্রতিদিন মুন্ডন কাজ করতে হবে নিজে নিজেই কেননা কেশরাজি তো আর জানে না তিনি প্রতিজ্ঞা করেছেন , মাঠে যেমন ঘাস বের হয় তেমনি মস্তকে কেশরাজি বের হয় । যাই হোক পুলিশ গ্রেফতার করেছিল কংগ্রেসের এই ডিজিটাল চাণক্যকে । অভিযোগ ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপমান করা টিভিতে বসে । আমার মতে টিভি নেতা ডিজিটাল চাণক্যকে টি আর পি দিল তৃণমুল সামান্য এই কান্ডের জন্য । এটাকে গুরুত্ব না দিলেই মনে হয় বাংলা ডিজিটাল সার্কাস দেখতে বাধ্য হতো না । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে এক প্রাক্তন আমলা একটি বই লিখেছিলেন যা নিয়ে মাঝে মাঝেই বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয় । বাংলার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে এক প্রাক্তন আমলার বই এর মতো তিনটি বই রয়েছে । আর এই তিনটি বই তিন মহান রাজনৈতিক পুরুষকে নিয়ে । একজন মহাত্মা গান্ধী অন্যজন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং পরের জন্য তার কন্যা দেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে । আসলে বাংলায় যে ডিজিটাল প্রজন্ম রয়েছে তাদের কাছে এই বই তিনটি অজানা ।

জাতীয় কংগ্রেসের ভীষ্ম পিতামহ মহাত্মা গান্ধীর বিবাহ‌বহির্ভূত অস্বাভাবিক যৌনজীবনের খোঁজ,‌ একাধিক নারী সঙ্গীর চাহিদার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরন দিয়ে সাজানো একাধিক বইয়ের মধ্যে সবচেয়ে বিক্রিত ব‌ইটার নাম GANDHI: SHOCKING SEX LIFE, লিখেছেন NELSON TAGOR। নেহেরুরবিবাহ বহির্ভূতরঙীন জীবনেরখুঁটিনাটির খোঁজপাবেন Nehru, women and the thorn in India’s rose লিখেছেন Sharmila Ravindar। নেহেরুজীরআপ্ত সহায়কএম ওমাথাই সাহেবেরলেখা Reminiscences of neheru age বইটাভালো করেপড়লে ‌ ইন্দিরাগান্ধীকে ইঙ্গিতকরে যেভাবেতার বিবাহবহির্ভূত একাধিকসম্পর্ককে তুলে ধরেছেন লেখকতার সাথেএকমাত্র তৃতীয়শ্রেনীর হিন্দিছবির তুলনাহতে পারে।এগুলি কিন্তু বিতর্কিত বই এবং অনেকেই এসব মিথ্যা প্রচার বলেন । যাইহোক বঙ্গ রাজনীতি কোনকালেই কুৎসা বিমুখ নয় , কুৎসা বেশি চলে বঙ্গ রাজনীতিতে সুযোগ পেলেই কুৎসার চাটনি টি আর পি বাড়িয়ে দেয় । দেশের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা বলা চলে । এসবের বাইরে উন্নয়ন নিয়ে লড়াই আজকাল টিভি মাধ্যমগুলি ছেড়েই দিয়েছে শুধু তারা প্রতিদিন মাছের বাজার বসায় আর সেই বাজার জন্ম দিয়েছে বেশ কিছু টিভি নেতার ।

এবার আসি ডিজিটাল চাণক্যের প্রতিজ্ঞার উপরে ।তৃণমুল সরকারের আয়ুস্কাল ২০২৬ সাল পর্যন্ত । স্বাভাবিক গণতন্ত্র মেনে চললে এই তৃণমুল সরকারকে কেউ এর মধ্যে ফেলতে পারবে না তাহলে ২৬ এর ভোট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে এবং ততদিন মানে চার বছর কেশরাশিহীন হয়েই থাকতে হবে । এবার একটা কল্পনা করা হোক । ২৬ এর বিধানসভা ভোটের ফল ত্রিশঙ্কু হলো এবং এমন অবস্থা হলো কংগ্রেস আর সিপিএম কিং মেকারের ভুমিকায় এবং বিজেপিকে সমর্থন করলে বিজেপি হবে রাজা আর তৃণমুলকে সমর্থন করলে তৃণমুল হবে রাজা । ডিজিটাল চাণক্যের প্রতিজ্ঞা রাখতে হলে বিজেপিকে সমর্থন করতে হবে কিন্তু তা কি করবে রাহুল গান্ধী আবার তৃণমুলকে সমর্থন করলে নাক কাটা যাবে টিভি নেতার । টিভিতে টি আর পি এক জিনিস আর মেঠো রাজনীতির অ্যাপ্ল্যায়েড ম্যাথামেটিক্স আর এক জিনিস । “এ প্লাস বি এর হোলস্কোয়ার” সুত্র দিয়ে লগারিদমের সমস্যার সমাধান করা যায় না এটা ভুলেই গিয়েছিলেন কংগ্রেসের এই টিভি নেতা । এবার ২৪ এর আগে বা পরে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার তৃণমুল সরকারকে ফেলে দিলে তা ডিজিটাল চাণক্যের জয় হবে না । লোকসভা ভোটে রাহুলের কংগ্রেস জয় পেল , চোর ধরো জেল ভরোতে মমতা অভিষেক জেলে আর টিভি নেতার জয় । এবার একটু বাস্তবের জগতে আসি । সেই রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পরে নরসিমা রাওয়ের সরকার কংগ্রেসের একক ক্ষমতায় আসার গল্প শেষ গল্প । তারপরে দেশে জোট রাজনীতি চলেছিল । এত দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল কংগ্রেসের সাইলেন্ট প্রধানমন্ত্রীর আমলে যার জেরে বিজেপির একক ক্ষমতায় দেশের শাসনভার লাভ । এবার সিপিএমের ক্ষমতায় আসি । বঙ্গ এবং ত্রিপুরা দুই রাজ্যেই বঙ্গ সিপিএম লবি ক্ষমতায় নেই । কেরলে আছে সিপিএমের কেরল লবির ক্ষমতা । কেরলে কংগ্রেস বিজয়ন সরকারের প্রধান শত্রু কারন সেখানে বিজেপি নেই আর বঙ্গে সিপিএমের সাথে কংগ্রেসের প্রেম বাড়লেও কেরলে কংগ্রেসকে কারাত সিপিএম ঝাঁটা হাতে তাড়া করবে যতই ইয়েচুরি সিপিএম বঙ্গে কংগ্রেসের সাথে হাত ধরুক না কেন । আসলে কংগ্রেস আর সিপিএমের বন্ধুত্ব অনেকটাই চুপকে চুপকে পরকিয়া প্রেমের মতো । এই মুহুর্তে রাহুলের গেটআপ দেখলে মনে হচ্ছে তিনি সাদা পাকা দাড়িতে প্রমাণ করতে চাইছেন তিনি মোদীজির মতো অভিজ্ঞ হয়েছেন । কিন্তু দেশের রাজনীতিতে রাহুলের কংগ্রেস একেবারেই আঞ্চলিক দলের ভুমিকায় । আঞ্চলিক দলগুলি যেমন তৃণমুল , আপ , এবং দক্ষিণের দলগুলি কিম্বা অখিলেশ , মায়াবতি বা লালু প্রসাদের দল কিম্বা নিতিশের দল সবাই কিন্তু রাহুলের নেতৃত্বের বিরোধী । এবার আসা যাক আর এক কল্পনায় । ত্রিশঙ্কু হল লোকসভা ভোটের ফল [ এই মুহুর্তে সে আশা নেই কারন এখনও বিজেপি এগিয়ে] এবং তৃণমুলের সমর্থন চাইলো রাহুল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েই দিল তখন কিন্তু কেশরাজিকে বাড়তে দিতেই হবে । আর রাহুলের কংগ্রেসকে আদৌ মেনে নেবে না আঞ্চলিক দলগুলি । এই অবস্থায় একটাই স্বপ্ন দেখা যায় বাম কংগ্রেস জোট একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসছে । সাগরদিঘির গ্যাস খেয়ে বেশি লাফানো ভালো নয় । সিপিএমের সেকুলার সিদ্দিকিকে নিয়ে লাফালাফি কিন্তু মারক্সিয় হিন্দুদের আবার বিজেপির পতাকা তলে নিয়ে যাবে । সাগরদিঘিতে কয়েকটি ফ্যাক্টর ছিল কিন্তু বঙ্গে স্বাস্থ্যসাথী আনা দলটির সাথে প্রধান লড়াই গেরুয়া শিবিরের । মনে রাখতে হবে কংগ্রেস বাংলায় প্রায় সাইনবোর্ড তাই সাগরদিঘির জয় নিয়ে ভেসে যাওয়ার কারন নেই , ভোট করতে হলে সংগঠন লাগে তা নেই কংগ্রেসের । তাই বলাই যেতে পারে

এই মুহুর্তে ডিজিটাল চাণক্যের ডিজিটাল প্রতিজ্ঞাপূরণ কার্যত জাঙিয়ার বুক পকেট ছাড়া আর কিছুই নয় , । টিভি নেতার টিভি জয় সম্ভব কিন্তু মাঠের রাজনীতিতে বড্ড বেমানান ।

10 views0 comments
bottom of page