উজবুকস্য উজবুক
সাগরদিঘি । চারিদিকে এখন আলোচনা এটাই । এদিকওদিক কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে তৃণমুলের হাওয়াই চটির ক্যারিশ্মা এবার শেষের দিকে । শূন্য হয়ে যাওয়া কংগ্রেস এবার খাতা খুললো । তাদের একসময়ের শত্রু যারা বলেছিল ডাইনি তাদের নেত্রীকে, যাদের গলায় ভেসে উঠতো দিল্লী থেকে এল গাই সঙ্গে বাছুর সি পি আই তারাই এখন আমি তোমাদের বন্ধুলোক বলে তাদের বুকে জড়িয়ে নিচ্ছে । বঙ্গের রাজনীতি? এখন বীরেন চাটুজ্যের কবিতা থেকে ধার করে বলাই যেতে পারে বাহবা সময় তোর সার্কাসের খেলা ।
সাগরদিঘি নির্বাচনে এমন দুটি দল জোট করেছিল যারা রাজ্য বিধানসভায় শূন্যছিল । কংগ্রেস খাতা খুললেও সিপিএমের খাতা এখনও শূন্য । সিপিএম যেভাবে আনন্দ করছে তাতে মনে হতেই পারে বন্ধুভাগ্যে পুত্র লাভের আনন্দে তারা আনন্দিত । আসলে সাগরদিঘি কি সত্যিই বাংলায় রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে চলেছে ? এখনই সে কথা বলার সময় আসে নি । আসলে বঙ্গ রাজনীতি এখন আর উন্নয়ন আর কর্মসংস্থানের উপরে নির্ভর করছে না । সিপিএম আর আই এস এফ জোট হতেই আই এস এফ হয়ে গেল ধর্ম নিরপেক্ষ । এদিকে যদি আই এস এফ কে ধর্ম নিরপেক্ষ বলা যায় তবে বিজেপিকেও বলা যেতেই পারে সেকুলার দল । বঙ্গ এখন বহুভাগে বিভক্ত । “বাম” পুষ্টিভোটে রামেরা শক্তিশালী হয়ে বঙ্গের জন্য আর কিছুই না করুক হিন্দুত্বের জাগরণ ঘটিয়েছে । বিজেপির ছোঁয়ায় মার্ক্সীয় বাম ভোট এখন সনাতন ধর্মের চামরের হাওয়ায় হিন্দুত্বে উজ্জীবিত । এই বাম – রাম কম্বিনেশন যুক্ত ভোটারেরা কতটা রামে আর কতটা বামে থাকবে তা নিয়ে ভাবতে হবেই । বাম কংগ্রেস জোট নৌশাদ সিদ্দিকিদের উপর ভরসা বাড়ালেই মারক্সীয় হিন্দুরা কিন্তু গেরুয়ার দিকেই থাকবে কারন বিজেপির এটাই সাফল্য বঙ্গে এখনো পর্যন্ত । সাগরদিঘি উপনির্বাচনে বেশ কিছু ফ্যাক্টর ছিল যা তৃণমুলের নতুন কান্ডারী নজর দেয় নি অভিজ্ঞতার অভাবে । প্রথমত সাগরদিঘিতে ৬৪ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট । বাম কংগ্রেস জোট মুসলিম প্রার্থী দেয় ।, সাগরদিঘি মুসলিম প্রার্থী পেয়েছিল এই প্রথম । নৌশাদ সিদ্দিকি পিরজাদা সিদ্দিকির বংশধর আর তাকে রাজ্য পুলিশ গ্রেফতার করে তাতে মুসলিম ভোট তৃণমুলে নয় বাম কংগ্রেসের দিকে যায় । বিজেপির নেতৃত্ব খুব ভালোভাবে জানতো সাগরদিঘিতে তারা কিছুই পাবে না তাই গাছাড়া দেয় এবং ভোট যায় তৃণমুলের বিরুদ্ধে । তৃণমুলের সাংগঠনিক শক্তি তেমনভাবে গড়ে উঠতে পারে নি কোনদিনই । মুকুল রায়ের থিয়োরি মেনেই গড়ে উঠেছিল সংগঠন এখনো সেই ধারাই চলছে যার ফলে সাংগঠনিক শক্তিতে ঘুন ধরে গিয়েছে । পদ আর লবি এখন সমার্থক তৃণমুলে । যার যত লবিবাজির ক্ষমতা সেই তত বড় পদে এটাই চলে আসছে সেই মুকুল রায়ের আমল থেকেই ।
বঙ্গ এখন নানানভাগে বিভক্ত । মতুয়া সমাজের ভোট , কামতাপুরি ভোট , গোর্খাল্যান্ড ভোট , জঙ্গলমহল ভোট বলতে শুরু করলে বিয়ে বাড়ির নিমন্ত্রণ তালিকাকেও হার মানাবে । বঙ্গে এখন কর্মসংস্থান ও উন্নয়নের নিরিখে ভোট হয় না , ভোট হয় জাতপাত , গোষ্ঠী আর টাকার জোরে । তাই লোকসভা ভোট একেবারেই আলাদা । বঙ্গে বিজেপি ৩০টি আসন পেতে চাইবে এবং এখন থেকেই সেভাবে ঘুঁটি সাজাচ্ছে । কংগ্রেসকে গুরুত্ব দিলে খুব বুদ্ধিমানের কাজ হবে না কারন কংগ্রেসের সারা রাজ্যে কোন ভুমিকাই নাই , ভোট মেরেকেটে সাত শতাংশ আর লোকসভা ভোটে সেটাও থাকবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ । বিজেপি লোকসভা ভোটে এত গাছাড়া দেবে না কারন তারা কাউকেই ছেড়ে কথা বলবে না । সিপিএমের আনন্দের কোন কারন নেই কারন বামের পুষ্টি ভোটেই বেড়ে উঠেছে রামেরা ফলে সেই ছবি যে আবার দেখা যাবে না কে বলতে পারে ।
তাই বন্ধুভাগ্যে পুত্র লাভের আনন্দে মশগুল না হয়ে বামেদের উচিৎ নিজের ঘর সাজিয়ে নেওয়া কারন লোকসভা ভোটে লড়াই হবে গেরুয়ার সাথে তৃণমুলের সাথে নয় ।